প্রথম পর্ব: “চিঠির রোদে” 🌤
🌼 পর্ব – ১ : চিঠির রোদে
সোনাপুর নামের ছোট্ট একটা গ্রাম। নদীর ধারে ধানের গন্ধে ভরা সকাল, বাঁশবনের ছায়া, আর গ্রামের স্কুলের ঘণ্টাধ্বনি—সবকিছুতেই ছিল একটা আলগা শান্তি। এই সোনাপুরেই থাকত দুই বন্ধু — ঋষি আর মীনা।
ঋষি ছিল গ্রামের পোস্টমাস্টারের ছেলে। একটু চুপচাপ, কিন্তু মুখে হাসি লেগেই থাকত। তার প্রিয় কাজ ছিল নদীর ধারে বসে ছবি আঁকা। মীনা ছিল স্কুলের সবচেয়ে দুষ্টু মেয়ে — বৃষ্টির দিনে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কাদায় লাফানো, কিংবা মাঠের মাঝখানে পাখির ডাকে দৌড়ে যাওয়া — এ যেন তার নিত্য কাজ।
শৈশবকালে দু’জনের বন্ধুত্বটা শুরু হয়েছিল খুব হঠাৎ করেই। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে মীনার বই ভিজে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। ঋষি নিজের ব্যাগ থেকে একটা পুরনো খাতা খুলে বলল,
“এই নাও, কালকে লেখাগুলো কপি করে নিও। না হলে ম্যাডাম বকবে।”
সেদিন থেকেই শুরু হয়েছিল তাদের গল্প।
প্রতিদিন বিকেলে তারা নদীর ধারে বসে থাকত। মীনা গল্প লিখত, আর ঋষি সেই গল্পের জন্য ছবি আঁকত। দু’জনে মিলে একটা পুরনো বাক্সে রাখত তাদের “গোপন পত্রিকা”— নাম দিয়েছিল চিঠির রোদে।
![]()
মীনা একদিন বলেছিল,
“ঋষি, যদি বড় হয়ে আমরা একে অপরকে ভুলে যাই?”
ঋষি হেসে উত্তর দিয়েছিল,
“তাহলে ওই বাক্সটা একদিন নদী ভেসে নিয়ে যাবে। কিন্তু তাতে গল্প থাকবে, আমাদের নাম থাকবে। তাই না?”
মীনা মাথা নেড়ে হেসেছিল।
কিন্তু ভাগ্য সব সময় এত মধুর হয় না।
একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ খবর এল—ঋষির বাবা বদলি হয়ে যাচ্ছেন শহরে। পরদিনই চলে যেতে হবে। ঋষি কান্না চেপে মীনাকে বলল,
“আমরা আবার দেখা করব, কথা দিচ্ছি।”
মীনা কাঁদতে কাঁদতে একটা ছোট চিঠি লিখে তার হাতে দিল,
“এই চিঠিটা যতদিন থাকবে, ততদিন আমার মনে রেখো।”
ঋষি চলে গেল। চিঠিটা বুকের কাছে চেপে রাখল মীনা।
দিন কেটে গেল, ঋষি আর ফিরল না। ধীরে ধীরে মীনা বড় হলো, স্কুল থেকে কলেজে গেল। জীবন এগিয়ে গেল, কিন্তু তার মনের কোণে রয়ে গেল সেই চিঠি আর সেই নাম — ঋষি।
সময় বয়ে গেল, মীনা এখন শহরের কলেজে পড়ে। মাঝে মাঝে ট্রেনে করে সোনাপুরে ফিরে আসে, কিন্তু এখন গ্রামের রাস্তায় আর কেউ তাকে “মীনা দুষ্টু” বলে ডাকে না। নদীর ধারে যে গাছটার নিচে তারা বসত, সেখানে এখন নতুন বাঁধ হয়েছে। তবুও, প্রতিবার ফিরে এসে সে সেই পুরনো বাক্সটার খোঁজ করে — কোথায় যেন হারিয়ে গেছে তাদের চিঠির রোদে।
একদিন সকালে, পোস্টঅফিসে একটা নতুন লোক এসেছে শুনে সে কৌতূহলী হয়ে গেল। চিঠি দিতে গিয়েই হঠাৎ থমকে গেল — ডেস্কের ওপারে বসে থাকা মানুষটা হেসে তাকিয়ে বলল, “চিঠি পাঠাবেন?”
মীনার বুকের ভেতর কেমন ধক্ করে উঠল। সেই হাসি, সেই চোখ— কিন্তু না, এটা কি সম্ভব?
লোকটা আবার বলল,
“আপনি কিছু বলছেন না কেন?”
মীনা কাঁপা গলায় বলল,
“আপনার নামটা জানতে পারি?”
সে মৃদু হেসে উত্তর দিল,
“ঋষি দত্ত। নতুন পোস্টমাস্টার।”
মীনার চোখ ভিজে উঠল। পৃথিবী যেন আবার সেই নদীর ধারে ফিরে গেল—যেখানে দু’জন ছোট্ট মানুষ গল্প লিখত, আঁকত, আর একে অপরকে হারিয়ে ফেলেছিল।
তারা কি এক হতে পারবে ?? জানতে হলে অবশ্যই Subscribe করে রাখুন……..
পরের পর্ব আসছে খুব শীঘ্রই…………

I like the story . Please part 2..
Part 2 will coming soon